কখনো কৃষক হয়ো না!

প্রকাশঃ নভেম্বর ২৬, ২০১৫ সময়ঃ ৪:২২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:২২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

krishiজীবন মানেই কষ্ট আর দুঃখের সাথে সংগ্রাম। এই সংগ্রামী জীবন নিয়ে চলার পথে কতজনই কতো ভয়াবহ আর মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তেমনি এক জীবন সংগ্রামে হেরে গিয়াছিলেন ভারতের এক দারিদ্র কৃষক। আজ বলবো তার হেরে যাওয়া জীবনে বলে যাওয়া শেষ কথা গুলো।

“কোনোদিন কৃষক হয়ো না” মৃত্যুর আগে ছেলের কাছে এটাই ছিল বাবার শেষ উপদেশ। কদিন আগে আত্মহত্যা করা ভারতের তেলেঙ্গানার এক কৃষকের এই বক্তব্যে পুরো দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো ছেলেকে দু’চোখ ভরে দেখতে চলে এসেছিলেন তার স্কুলে। চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল পথ। রাস্তায় পড়ে থাকা ইটের টুকরায় বারবার হোঁচট খাচ্ছে পা দু’টো। তবুও ছেলের টানে স্কুলের গলি এড়াতে পারেননি তিনি। চোখ মুছে আলতোভাবে গেট খুলে ঢুকে পড়েছিলেন স্কুলের প্রাঙ্গণে। শিক্ষিকার অনুমতি নিয়ে বুকে আঁকড়ে ছেলে ভামশিকে নিয়ে যান পাশের চায়ের দোকানে। কিনে দেন চা আর পাউরুটি। সঙ্গে হাতে গুঁজে দেন পাঁচ টাকা। বাবার কাছ থেকে এই উপহার পেয়ে তখন আপ্লুত সাত বছরের ভামশি। কিন্তু এত সাময়িক। এরপরই তার জীবনে অপেক্ষা করছিল এক তীব্র যন্ত্রণা, এক অপরিসীম হাহাকার। কে জানত, বাবার সঙ্গে এ দেখাই তার শেষ দেখা। এরপর এক চরম পদক্ষেপে নিজেকে শেষ করে দেবেন তার বাবা। এই ক্ষুদে শিশুর পক্ষে তা বোঝাও সম্ভব নয়। কিন্তু সারাজীবন হয়তো তার মনে থেকে যাবে বাবার বলে যাওয়া শেষ শব্দগুলো। ‘ভালো করে পড়াশোনা করো। কোনোদিনও কৃষক হয়ো না’।

এরপর ছেলেকে ফের স্কুলে দিয়ে যান তিনি। স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে কথা বলেন, স্কুলের শিক্ষিকা কৃষ্ণার সঙ্গেও। তিনি জানান, ‘ভামশি যাতে ভালো করে পড়াশোনা করে, তা দেখার জন্য বারবার অনুরোধ করেন তিনি। এরপরই ছেলেকে বিদায় জানিয়ে চলে যান। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরই খবর আসে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ভামশির বাবা।’ কৃষ্ণা জানান, কৃষকের জীবনের নির্মম যন্ত্রণা যেন তার ছেলেকে ছুঁতে না পারে। এটাই ছিন তার শেষ ইচ্ছা।

উল্লেখ্য, ভারতে কৃষকদের আত্মহত্যার হার ক্রমেই বাড়ছে। আর এদিক থেকে এগিয়ে আছে মহারাষ্ট্র। এই রাজ্যে ২০১৩ সালে তিন হাজার ১৪৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ভারতের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে ৬০ হাজার ৭৬৮ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটির অভিমত, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও খরার জন্য ভারতে ফসল উৎপাদন ঠিক মতো হয় না। তাছাড়া একদিকে কৃষি খরচও বেড়েছে, অন্যদিকে বছরে একাধিক বার চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অসুবিধায় পড়েন এই অঞ্চলের কৃষকরা। আবার ব্যাংক ঋণের সুযোগ না থাকায় বাধ্য হন মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদের হারে ঋণ নিতে, যা তাদের ঠেলে দিচ্ছে আত্মহত্যার দিকে। এমন কি দেশটির নতুন সরকার গত বৃহস্পতিবার লোকসভায় যখন সাধারণ বাজেট পেশ করছিল, সেদিনই আত্মহত্যা করেছেন মহারাষ্ট্রের বিদর্ভের তিন ঋণগ্রস্ত কৃষক। কিন্তু শেষটা বোধহয় সবাইকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G